সিবিএন ডেস্ক:
সেন্টমার্টিনের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, যেকোনো মূল্যে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও সীমান্তে নিরাপত্তায় বিজিবি বদ্ধপরিকর। সেন্টমার্টিনকে কেন্দ্র করে যতটুকু কানে এসেছে কিংবা অনেকেই বলছে, সেগুলো আসলেই গুজব।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক এ কথা বলেন।

মহাপরিচালক আরও বলেন, সেন্টমার্টিনকে নিয়ে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে অনেকেই। আমি নিজেও সেখানে গেছি। সেখানে বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সাবধান করে এসেছি। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও বিদ্রোহী দলের মধ্যে নাফ নদের তীরবর্তী এলাকায় তুমুল যুদ্ধ চলছে। যখন একটি-দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ চলে তখন এর পাশাপাশি এদিক-ওদিক গোলাগুলি হতে পারে। কিছু গোলা এদিক-ওদিক গেছে, কিছু ট্রলারে গেছে। আমরা মিয়ানমারের দুই পক্ষকে জানিয়েছি, আমাদের ট্রলারের মধ্যে পরবর্তীতে যেন কোনো ঘটনা না ঘটে।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, এরপর কিন্তু আর গোলাগুলি হয়নি। তবুও সেন্টমার্টিনে যেসব ট্রলার চলাচল করে তাদের বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে বেঁধে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ওইদিক দিয়ে (সেন্টমার্টিন) যেসব ট্রলার যাবে, তারা যেন বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে চলাচল করে। সেক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। তারপরও সাবধানতা অবলম্বন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিকল্প পথে কক্সবাজার থেকে জাহাজ, ট্রলার গমনাগমন করছে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ যে এলাকাটুকু ওই এলাকা এভয়েড (বাদ দিয়ে) করে চলাচলের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) অপতৎপরতার প্রতিরোধের বিষয়েও সাংবাদিকরা জানতে চান বিজিবি মহাপরিচালকের কাছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলছে। এরমধ্যে অনেক সফলতা এসেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি হলো এখনো অপারেশন চলমান আছে। বান্দরবান অধ্যুষিত থানচি, রুমাসহ বিভিন্ন এলাকা সম্পূর্ণভাবে বিপদমুক্ত ও জনসাধারণের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ না করা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলমান থাকবে।

আরাকান আর্মি বাংলাদেশের জন্য থ্রেট মনে করা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর জন্য থ্রেট। তারা আমাদের জন্য থ্রেট কিংবা বন্ধু কোনো কিছুই না। আমরা অবজারভ করছি। কোনোভাবেই যেন আমাদের দেশের সীমান্তে কোনো নিরাপত্তা বিঘ্ন না হয়।

সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটলে তা প্রতিরোধে নিরাপত্তা নিশ্চিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও ডিজিটাল সার্ভেলেন্সসহ যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করছি। বর্তমান সরকারের অনুমোদনক্রমে ক্রমেই তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এর আগে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন তিনি।

ওই সময় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।